পর্ব ২
গ্রীন এইচ.আর.এম এর ফাংশন গুলো কি কি হতে পারে? গ্রীন এইচ.আর.এম এর কাজ গুলো এমনভাবে নির্ধারণ করা হয় যেন তা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। যেমন —
গ্রীন রিক্রুটমেন্টঃ আমরা সবাই জানি কোম্পানির হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের একটি মূখ্য কাজ থাকে যোগ্য ও দক্ষ কর্মী নিয়োগ। এক্ষেত্রে গ্রীন রিক্রুটমেন্ট প্রসেসের অধীনে এইচ.আর. গণ এমন কর্মী নিয়োগের চেষ্টা করেন যারা যোগ্য এবং দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ব্যাপারেও সচেতন।অর্থাৎ যারা রিসাইকেলিং, এনার্জি কমভার্জান ইত্যাদি বিষয়গুলোর সাথে ইতিমধ্যে পরিচিত।
বিশ্বের বেশ কিছু কোম্পানি আছে যেমন-সিমেনস,
বি.এ.এস.এফ. পরিবেশ বান্ধব কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজেদের একটা ভালো ইমেজ তৈরি করেছে এবং যা উচ্চ মানসম্পন্ন কর্মীদের আকর্ষণ করে।
গ্রীন পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্টঃ একটা নির্দিষ্ট সময় পর কর্মীদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করা হয় যতে কর্মীদের পেশাদারী দক্ষতা এবং লক্ষ্য অর্জনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কর্মীদের কার্যক্রম মূল্যায়নের ক্ষেত্রে তারা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কতটুকু ভূমিকা পালন করলো, কি কি কর্ম পদক্ষেপ গ্রহণ করলো এবং বাস্তবায়ন করলো সেটা ও পর্যবেক্ষণ করা হয়।
গ্রীন ট্রেনিং এন্ড ডেভেলপমেন্টঃ প্রতিটি কোম্পানিই তার কর্মী উন্নয়নের জন্য কিছু ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে থাকে। গ্রীন ট্রেনিং এন্ড ডেভেলপমেন্টের অধীনে কর্মীদের নিজস্ব কর্ম সম্বন্ধীয় ট্রেনিং এর পাশাপাশি, পরিবেশ সম্বন্ধীয় জ্ঞান, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ বান্ধব মানসিকতা তৈরিরও ট্রেনিং দেয়া হয়। যেমন- পণ্যের অপব্যয় কমানো, অযথা শক্তি(বিদ্যুৎ,জ্বালানি ইত্যাদি) ব্যয় না করা, পন্যের পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করা ইত্যাদি। মূলত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ব্যপারে কর্মীদের সচেতন করে তোলার একটা প্রয়াস এটি।
গ্রীন কম্পেনসেশনঃ কর্মীদের অনুপ্রাণিত কারার জন্য এবং কাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য কোম্পানি তাদের কার্যক্রম এর উপর ভিত্তি করে পুরষ্কার এবং সম্মানীর ব্যবস্থা করে থাকে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি অংশ যোগ করা হয় ঐসকল কর্মী জন্য যারা কোম্পানির এবং সর্বোপরি পরিবেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন, ইকো ফ্রেন্ডলি ব্যবস্থাপনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন তাদের জন্য । এতে করে কোম্পানির সকল কর্মীই পরিবেশের প্রতি একটু বেশি সচেতন হয়।
গ্রীন এমপ্লয়ি রিলেশনঃ কোম্পানির কর্মীদের, কোম্পানির কাজ, সিদ্ধান্ত গ্রহন এবং সমস্যা সমাধানে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণ একটি সুষ্ঠ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করে। কর্মীদের এই মনোভাব যখন পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও বিদ্যমান থাকে তখন তাদের গ্রীন ম্যানেজমেন্ট আরো ভালো হয় এবং কর্মীরা সতর্ক থাকে, তাদের কাজের দ্বারা যেন পরিবেশ যতটা সম্ভব কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
গ্রীন বিল্ডিংঃ কোম্পানির কাঠামো উন্নয়নে এমন দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে হবে যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং এতে করে কর্মপরিবেশ সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর হবে। আবার কোম্পানিতে সবুজের সমারোহ থাকলে তা কর্মীদের মনকেও পুলকিত করে।
কাগজ বিহীন অফিসঃ আজকাল ই-বিজনেসের ব্যপকতা বাড়ছে, মানুষজন অনেক বেশি অনলাইন বেইজ কাজ করা শুরু করেছেন যার ফলে কাগজ বিহীন অফিস তৈরি হচ্ছে। কাগজ তৈরির জন্য প্রতিবছর ব্যাপক পরিসরে বৃক্ষ নিধন হয়, বন উজাড় হয় যা আমাদের পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কাগজ বিহীন অফিস পরিচলনার প্রবনতা যখন মানুষের মধ্যে বৃষ্টি পাবে তখন বৃষ্টি নিধন অনেকাংশেই কমে যাবে।
এমনি আরো বেশ কিছু ফাংশন রয়েছে যেমন প্রাকৃতিক শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে কৃত্রিম শক্তির ব্যবহার কমানো। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের কথা। আবার পন্যের পুনরায় ব্যবহার বৃদ্ধি করা যাতে কাঁচামালের ব্যবহার এবং অপচয় হ্রাস পায় ইত্যাদি।
গ্রীন এইচ.আর. পলিসি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এর অনেক ভালো দিক এবং সুবিধা থাকলেও কোম্পানিতে গ্রীন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বজায় রাখা মোটেও সহজ ব্যপার নয়, এক্ষেত্রে যেমন মানুষের মন মানসিকতা একটা বড় ব্যপার ঠিক তেমনি প্রাথমিক পর্যায়ে খরচও অনেক বেশি হয়।
মালেশিয়ায় পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে সাংগঠনিক পর্যায়ে গ্রীন এইচ.আর.এম ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং বক্তিগত পর্যায়েও এটি কর্মীদের কাজের সন্তুষ্টিকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
আপনি নিজেই চিন্তা করুন না আপনি এমপ্লয়ি হিসেবে আপনি আপনার অফিসের পরিবেশ কেমন পছন্দ করবেন?
মরিয়ম বিনতে আজাদ বিজয়ী
কন্টেন্ট রাইটিং টিম